কলকাতা মেট্রো: ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেলপথের গৌরবময় ইতিহাস

ভারতবর্ষের প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবা হিসেবে পরিচিত কলকাতা মেট্রো শুধু একটি পরিবহন মাধ্যম নয়, এটি শহরের উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রতীক। ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়া কলকাতা মেট্রো রেল পথ পরিকাঠামো এবং পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।




মেট্রো রেলের সূচনা: পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন

কলকাতার যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৪৯ সালেই মেট্রো রেলের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল।

পূর্বসূত্র: স্বাধীনতার পরে কলকাতা শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলানোর জন্য বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

পরিকল্পনা: ১৯৭১ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় কলকাতা মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে দুটি করিডোর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল—উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম।

নির্মাণ: কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। নানা চ্যালেঞ্জ এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়।

কলকাতা মেট্রোর উদ্বোধন ও যাত্রা শুরু

প্রথম পরিষেবা শুরু হয় ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর, এসপ্ল্যানেড থেকে ভূবনেশ্বর (টালিগঞ্জ) পর্যন্ত ৩.৪ কিমি রুটে।

এটি ভারতের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় মেট্রো পরিষেবা।

উদ্বোধনের সময় এটি শুধুমাত্র আংশিক রুটে চললেও পরবর্তী বছরগুলিতে পুরো উত্তর-দক্ষিণ করিডোর চালু করা হয়।

উন্নয়নের ধাপসমূহ

1. উত্তর-দক্ষিণ করিডোর:

এটি প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের করিডোর, যা দক্ষিণেশ্বর থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

2. পূর্ব-পশ্চিম করিডোর:

২০০৯ সালে দ্বিতীয় করিডোর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটি হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ৫ (সল্টলেক) পর্যন্ত চলবে। এই রুটে হুগলি নদীর তলদেশে নির্মিত মেট্রো টানেল ভারতের প্রথম।

3. প্রযুক্তিগত উন্নতি:

প্রথমদিকে ব্যবহৃত রোলিং স্টক ছিল হস্তচালিত, যা পরে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ট্রেনে রূপান্তরিত হয়।

বর্তমানে কলকাতা মেট্রোতে অত্যাধুনিক সিগন্যালিং প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব কোচ ব্যবহৃত হচ্ছে।

মেট্রোর বর্তমান অবস্থা ও গুরুত্ব

বর্তমান রুট ও পরিষেবা:

বর্তমানে কলকাতা মেট্রোতে তিনটি লাইন কার্যকর:

লাইন ১: উত্তর-দক্ষিণ করিডোর।

লাইন ২: পূর্ব-পশ্চিম করিডোর।

লাইন ৩: নতুন করিডোর যা দ্রুত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

সুবিধা:

কলকাতা মেট্রো শহরের ৭০ লক্ষ মানুষকে প্রতিদিন পরিবহন সুবিধা প্রদান করে। এটি দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।

পরিকল্পনা:

২০৩০ সালের মধ্যে কলকাতা মেট্রোকে ১০০ কিমি পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

কলকাতা মেট্রোর চ্যালেঞ্জ ও সাফল্য

1. চ্যালেঞ্জ:

প্রথম প্রকল্পের সময় সীমিত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা ছিল।

জমি অধিগ্রহণ এবং যানজটের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়।

2. সাফল্য:

কলকাতা মেট্রো ভারতের অন্যান্য শহরের মেট্রো নির্মাণে পথপ্রদর্শক হয়েছে।এটি শহরের যানজট কমাতে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

কলকাতা মেট্রো কেবলমাত্র একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, এটি শহরের গর্ব এবং প্রযুক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এর সাফল্য ভারতের অন্যান্য শহরে মেট্রো পরিষেবা চালুর জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কলকাতা মেট্রো আরও অনেক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post