ভারতের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হলো গোয়া রাজ্যের ভারতের সঙ্গে সংযুক্তি, যা ১৯৬১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঘটেছিল। ১৫১০ সাল থেকে পর্তুগিজ শাসনের অধীনে থাকা গোয়া, ভারতের শেষ উপনিবেশগুলোর একটি ছিল। স্বাধীনতার পরেও পর্তুগিজরা গোয়া ছাড়তে অস্বীকার করায় ভারত সরকার "অপারেশন বিজয়" নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে গোয়া, দমন এবং দিউকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে।
পটভূমি:
স্বাধীনতার পরে, ভারত সরকার গোয়া এবং পর্তুগিজ শাসিত অন্যান্য অঞ্চলগুলিকে শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের অংশ করার জন্য পর্তুগিজ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করে। কিন্তু পর্তুগাল সরকার এই অঞ্চলগুলি ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে এবং সেখানে তাদের শাসন বজায় রাখার চেষ্টা চালায়।
গোয়ার জনগণের মধ্যেও স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল। নেতৃস্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ড. রাম মানোহর লোহিয়া এবং স্থানীয় জনগণ পর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে একাধিক আন্দোলন শুরু করেন।
অপারেশন বিজয় এবং গোয়া মুক্তি:
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে, ভারত সরকার ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে অপারেশন বিজয় নামে একটি সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
১৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী অংশ নেয়।মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পর্তুগিজ বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
১৯ ডিসেম্বর গোয়া, দমন এবং দিউ ভারতের অংশ হয়। এই দিনটিকে "গোয়া মুক্তি দিবস" হিসাবে উদযাপন করা হয়।
গোয়া ভারতের অংশ হওয়ার পর:
১৯৬১ সালে গোয়া ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৯৮৭ সালে এটি ভারতের একটি পূর্ণ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে গোয়া তার সমুদ্রতীরবর্তী সৌন্দর্য এবং পর্যটনের জন্য বিখ্যাত হলেও, এর সংযুক্তির ইতিহাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
স্মরণীয় দিন:
গোয়া মুক্তি ভারতের ঐক্যের প্রতীক এবং উপনিবেশবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়ার যাত্রার শেষ অধ্যায়। ভারতের জনগণ এই দিনটিকে জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতার বিজয়ের দিন হিসেবে উদযাপন করে।